বঙ্গভূমির প্রতি

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কবিতা | | NCTB BOOK

রেখো, মা, দাসেরে মনে,      এ মিনতি করি পদে।
                           সাধিতে মনের সাধ
                           ঘটে যদি পরমাদ,
মধুহীন করো না গো।           তব মনঃকোকনদে।
                         প্রবাসে, দৈবের বশে,
                         জীব-তারা যদি খসে
এ দেহ-আকাশ হতে,          নাহি খেদ তাহে।
                         জন্মিলে মরিতে হবে, 

                       অমর কে কোথা কবে,
চিরস্থির কবে নীর,               হায় রে, জীবন-নদে?
                      কিন্তু যদি রাখ মনে,
                     নাহি, মা, ডরি শমনে;

 মক্ষিকাও গলে না গো        পড়িলে অমৃত-হ্রদে।
                     সেই ধন্য নরকুলে,
                  লোকে যারে নাহি ভুলে,
মনের মন্দিরে সদা             সেবে সর্বজন
                কিন্তু কোন গুণ আছে, 

                  যাচিব যে তব কাছে,
হেন অমরতা আমি,            কহ, গো, শ্যামা জন্মদে।
                  তবে যদি দয়া কর,

                  ভুল দোষ, গুণ ধর
অমর করিয়া বর            দেহ দাসে, সুবরদে! !
                ফুটি যেন স্মৃতি-জলে, 

                 মানসে, মা, যথা ফলে
মধুময় তামরসকী          বসন্ত, কী শরদে

Content added By

শব্দার্থ ও টীকা

মিনতি — বিনীত প্রার্থনা ।

পরমাদ — প্রমাদ; ভুল-ভ্রান্তি।

কোকনদ — লাল পদ্ম ।

নীর — পানি; জল ।

শমন — মৃত্যুর দেবতা ।

মক্ষিকা — মাছি।

শ্যামা জন্মদে  শ্যামল জন্মভূমি অর্থে ।

বর — আশীর্বাদ।

মানস — মন।

তামরস — পদ্ম ।

শরদে — শরৎ কাল বোঝাতে 
 

Content added By

পাঠের উদ্দেশ্য

এই কবিতা পাঠের মাধ্যমে স্বদেশের প্রতি শিক্ষার্থীর মনে শ্রদ্ধা ও বিনয়ভাব জেগে উঠবে। বিদেশের ঐশ্বর্য ও জৌলুস সত্ত্বেও নিজ দেশের প্রতি মনের গভীরে আগ্রহবোধ সৃষ্টি হবে।

Content added By

পাঠ-পরিচিতি

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত কয়েকটি গীতি কবিতার একটি বঙ্গভূমির প্রতি'। এ কবিতায় স্বদেশের প্রতি কবির শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দেশকে কবি মা হিসেবে কল্পনা করে নিজেকে ভেবেছেন তার সন্তান। প্রবাসী মধুসূদন ভেবেছেন—মা যেমন সন্তানের কোনো দোষ মনে রাখেন না, দেশমাতৃকাও তাঁর সব দোষ ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্য তিনি বিনয়ের সঙ্গে এও বলেছেন যে, তাঁর এমন কোনো মহৎ গুণ নেই, যে-কারণে তিনি স্মরণীয় হতে পারেন। বিনয়ী কবি তাই দেশমাতৃকার কাছে এই বলে প্রণতি জানাচ্ছেন, তিনি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকেন।

Content added By

কবি-পরিচিতি

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথা বিরোধী লেখক। তিনি মহাকাব্য, গীতিকাব্য, সনেট, পত্রকাব্য, নাটক, প্রহসন ইত্যাদি রচনা করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। শৈশব থেকে তাঁর মনে কবি হওয়ার তীব্র বাসনা ছিল। তিনি মনে করেছিলেন, বিলেত না গেলে কবি হওয়া যাবে না। বিলেতে গেলে সুবিধা হবে—এ আশায় তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ফলে তাঁর নামের আগে 'মাইকেল' শব্দটি যুক্ত হয়। পরে তিনি সত্য উপলব্ধি করতে পারেন এবং বাংলায় সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন। বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল, তেলেগু ইত্যাদি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম মহাকাব্য 'মেঘনাদবধ কাব্য' রচনা করেন। তাঁর রচিত প্রহসন : ‘একেই কি বলে সভ্যতা?', ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ'; নাটক : ‘শর্মিষ্ঠা', ‘পদ্মাবতী’,‘কৃষ্ণকুমারী’; পত্রকাব্য :‘বীরাঙ্গনা' ইত্যাদি। ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী' নামে একটি সনেট-সংকলনও তিনি রচনা করেন। তিনি ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। 

Content added || updated By

কর্ম-অনুশীলন

ক. ‘বঙ্গভূমির প্রতি' শীর্ষক কবিতাটি নিয়ে আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন কর (শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে। শুদ্ধ উচ্চারণ, উচ্চারণে স্পষ্টতা, শ্রবণযোগ্যতা, বোধগম্যতা, আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে।)

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content

সৃজনশীল প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion